
অল্প সময়ে একাধিক ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা বাড়াচ্ছে
- আপলোড সময় : ২১-০৪-২০২৫ ১১:৪২:৫১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২১-০৪-২০২৫ ১১:৪২:৫১ অপরাহ্ন


সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘন ঘন একাধিক ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। আর অল্পসময়ে একাধিক ভূমিকম্প দেশে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা বাড়াচ্ছে। বিগত তিন মাসে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী চার দেশে ৪৪টি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র ভূমিকম্পের তথ্য নিশ্চিত করে। ঢাকা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জসংলগ্ন ভারত সীমান্তে এর উৎপত্তিস্থল। আবহাওয়া অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশে ছোট-বড় অন্তত ৪৪টি ভূমিকম্প হয়েছে। তার মধ্যে গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। একই দিনে ওই দেশটিতে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প (আফটার শক) অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পে দেশটিতে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এটি বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানেও অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ওই দেশের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন ৩০ তলা একটি ভবন ধসে পড়ে। তাছাড়া জানুয়ারিতে চীনে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ও ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এবং ভারতে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৩, ৩ দশমিক ৫ ও ২ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। একই মাসে নেপালে ৫ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ২ মাত্রা এবং ভারতে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। মার্চের শুরুতে মিয়ানমার ও ভারত সীমান্তে ৫ দশমিক ৬ ও নেপালে ৫ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আর এপ্রিলের শুরুতে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নেপাল ও ভারত। সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বাংলাদেশে ৪ ও মিয়ানমারে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ওই সময়ে বাংলাদেশে তিনটি কম মাত্রার ভূমিকম্প হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও নেপালে বেশি মাত্রার একাধিক ভূমিকম্প হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশে অল্প সময়ে একাধিক ভূমিকম্পকে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের জন্য বড় শঙ্কার বিষয় বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বাংলাদেশে ১৯১৮ সালে সর্বশেষ বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। বেশি মাত্রার ভূমিকম্প একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আবারো ফিরে আসে। ফলে গত ১০০ বছরে বড় ভূমিকম্প না হওয়ায় সেটি আবারো ফিরে আসতে পারে। দেশে ৫ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগের জন্য বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার অ্যাক্টিভ অঞ্চল হওয়ায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। স্বাভাবিকভাবে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল হচ্ছে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। সেখানে প্রায় সময়ই ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। তবে এখানে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ১৯১৮ সালের পর আর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। বেশি মাত্রার ভূমিকম্প একটি সময় পর ফিরে আসে। যার কারণে এ অঞ্চল ওই ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এটিএম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তবে ভূমিকম্প অনুভবের ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের প্লেট, উৎপত্তিস্থল, দূরত্ব, সময়কাল এসব নির্ভর করে। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভবন নির্মাণের কারণে ৫ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ঢাকা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ